ওয়েব ডেস্ক: শুক্রবার রাত ৮টা। বাগুইআটি। ছোট খোলা গাড়িতে মাঝারি আকারের সরস্বতী (Saraswati Puja 2025) প্রতিমা। ঠাকুরের পায়ের কাছে বসে ছাত্র ছাত্রীরা (Students)। এক হাত প্রতিমায়, অন্যহাতে মোবাইল। এরকম একের পর এক গাড়ি এয়ারপোর্টের দিকে এগিয়ে চলেছে। এক বিক্রেতা জানালেন, এদিনই প্রথম প্রতিমার পসরা সাজিয়ে বসেছেন তিনি। বিক্রির হার গড়ে মাঝারি মানের। কারণ এবার দু’দিন সরস্বতী পুজো। ফলে বিক্রিও সেভাবে ভাগেভাগে হচ্ছে। তাঁর কাছে ছোট সাইজের প্রতিমা ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি (Sell) হচ্ছে। বড় সাইজের প্রতিমা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শনিবার দুপুর পৌনে বারোটা। সেন্ট্রাল মোড়। ছোট হাতি গাড়িতে পেল্লাই সাইজের সরস্বতী মূর্তি। পাশে দাঁড়িয়ে দু’জন মাঝবয়সী লোক। হাবভাব দেখে বোঝা গেল সরস্বতীর কৃপা তাঁদের উপর সেভাবে পড়েনি। তবে পরম যত্নে দুহাত দিয়ে ধরে বিদ্যার দেবীকে প্যান্ডেলে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
বিভিন্ন ক্লাবের সামনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (Educational Institutes) প্যান্ডেল তৈরি হয়ে গিয়েছে। মূর্তিও এসে গিয়েছে অনেক মণ্ডপে। বাজারে হরেক কিসিমের কুল থরে থরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত। বাকি শুধু একটি রাত। ভোর থেকে উঠে পুজোর আয়োজন করতে হবে, নতুন কিছু করতে কৈশোরের আনন্দে অনেকের ঘুম হবে না। রবিবার সকাল থেকেই আলপনা এঁকে বাগদেবীকে অভ্যর্থনা জানানো হবে। বসন্তী পঞ্চমীর আগেই এদিন রাজারহাট রোডে কয়েকজনকে বাসন্তী রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবিতেও দেখা গিয়েছে। তাঁরা প্রতিমা কিনতে যাচ্ছিলেন।
আরও পড়ুন: কেমন কাটবে সরস্বতী পুজো, কী বলছে আবহাওয়া দফতর?
সরস্বতী পুজো সবার কাছে নস্ট্যালজিয়ার। কারণ হাতেখড়ি থেকেই এই পুজোয় নাম নথিভুক্ত হয়ে যায়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধাপে এই পুজো আলাদা মাহাত্ম্য নিয়ে আসে। গ্রাম বাংলায় এখনও দল বেঁধে কচি কাঁচাদের রাস্তায় দড়ি অথচা বাঁশ ফেলে চাঁদার উপরোধ করতে দেখা যায়। মা-ঠাকুরমাদের পুরনো শাড়ি দিয়ে নিজেরাই ছোট প্যান্ডেল করে পুজোর আয়োজন করে। চেকে টাকা নেওয়া হয় এখনও। কলেজে সরস্বতী পুজো মনে বসন্ত নিয়ে আসে। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে কর্মজীবনে প্রবেশের আগে সেই পুজোর গুরুত্ব আলাদা। এই বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের থেকে নানা মত পাওয়া গেল। তাঁদের কথায়, এবার এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সরস্বতী প্রতিমা কোথা্ও তৈরি হয়েছে কি না সেটাই খেয়াল রাখতে হবে। সরস্বতী মূর্তির পায়ের কাছে পড়ার বই রেখে দিতাম ছোট থেকেই। যাতে ঠাকুরের আশীর্বাদ পাওয়া যায়। এবার সেখানে ঠাঁই পাবে ট্যাব, ল্যাপটপ কিংবা মোবা্ইল। আলপনার জায়গা নেবে বিশেষ রঙ। চেকের বদলে অনলাইনে চাঁদা এটাই নতুন ট্রেন্ড। শনিবার ঝিরঝিরে বৃষ্টি বিক্ষিপ্তভাবে হলেও শীত বিদায়ের পথে। সরস্বতী পুজো মানে প্রতিযোগিতার আয়োজনও। পুজো আয়োজনে এ পাড়া বনাম ওপাড়ার কনটেস্ট। ক্লাব বনাম অন্য ক্লাব। একাধিক ছাত্র সংগঠনের মধ্যে পুজোর আয়োজনের প্রতিযোগিতা। এবার তো আবার খাস কলকাতা শহরে আয়োজন ঘিরে সংঘর্ষের জেরে পুলিশের নিরাপত্তায় সরস্বতী পুজোর আয়োজনও হচ্ছে। আবার বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে প্রেমের প্রতিযোগিতাও। এবার রবিবার পুজো হবে না কি সোমবার তা নিয়ে প্রতিযোগিতা। সব মিলিয়ে জমজমাট প্রস্তুতি, মিষ্টি প্রতিযোগিতা, তুঙ্গে পড়ুয়াদের উন্মাদনা। ওং সরস্বতী..
দেখুন অন্য খবর: